খবরের সময় ডেস্ক,
৮০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। ভাড়া বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছে তারা। তারা দাবি করেছেন, বাসের ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। করোনা সংকট কেটে গেলেও এ ভাড়া আর কমবে কী না- তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন কেউ কেউ। শনিবার পৃথক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানিয়েছে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো।
শনিবার বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিআরটিএ। এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এক বিবৃতিতে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অন্যায় ও অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা সংকটে জনগণ এমনিতেই বিপর্যস্ত। সরকার বিশেষজ্ঞ মতামত না নিয়েই সবকিছু খুলে দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চাইছে ও জনগণকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। উপরন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যা সম্পূর্ণ অন্যায়, অযৌক্তিক ও জনগণের সঙ্গে এক নির্মম তামাশা ছাড়া কিছুই না। বিৃবতিতে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে গণপরিবহন চালাবে তা কোনোভাবেই দেশবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। যেখানে বিআরটিএ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাতে বাধ্য করবে, এটা কোনো মতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
অপর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে কর্ম হারিয়ে নিদারুণ আর্থিক সংকটে থাকা জনগণের ওপর বর্ধিত ভাড়া চাপিয়ে দেয়া হলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল। তারা বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের যে চিত্র তাতে যাত্রীবাহী গণপরিবহন হয় লকডাউন করতে হবে, নয় তো পুরোপুরি চালু করতে হবে। আংশিক বা সীমিত আকারে চালু করে কোনো লাভ হবে না। কারণ যাত্রীর চাপ ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে সরকারের সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর উদ্যোগ ব্যর্থ হবে, মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় কর্মহীন মানুষ এমনিতেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সেখানে বর্ধিত বাস ভাড়া আদায়ের অনুমতি দেয়া হলে এটা হবে সড়কে ডাকাতির শামিল। কারণ বাস মালিক-শ্রমিকরা কোনো সময় সরকারের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে থাকেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক বিবৃতিতে বলেছে, করোনা মহামারীর এ সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অজুহাতে নিদারুণ আর্থিক সংকটে পতিত দেশের অসহায় জনগণের ওপর জোর করে একচেটিয়াভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পর্কিত কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়ে, গণপরিবহন চালুর মধ্য দিয়ে জনগণ যেমনটি চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে নারকীয় পরিবেশের কোনো প্রকার উন্নতি ঘটানো ব্যতীত উল্টো গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সড়কে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি আরও বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে।